যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভারের কারণে যাত্রাবাড়ী এবং যাত্রাবাড়ী পরবর্তী এলাকা যেমন কুতুবখালি, কাজলা, শনির আখড়া, দনিয়া এসব এলাকার জনগণের ইতোপূর্বের যাতায়াতকালীন সময় অপচয় এবং নিশ্চুপ নিথড়ভাবে গণ পরিবহণে বসে থাকার কষ্ট এবং দূর্দশা হয়তো রোধ হয়েছে; কিন্তু দুর্ভোগ কমেনি ফ্লাইওভারের গুলিস্থান অংশে নামার অপ্রতুল পরিসরের কারণে, ফলতঃ সেখানে নিয়মিত সৃষ্টি হচ্ছে বোতল নেক প্রবলেম।
যাত্রাবাড়ী অংশে গেলে দিনের চব্বিশ ঘন্টাই ফ্লাই ওভার থেমে নামার অংশে কোনরূপ যানজট পরিলক্ষিতই হবে না, আর ওঠার অংশে ফ্লাই ওভার আর বাম পাশে ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে যাত্রাবাড়ী যাবার রাস্তার অপরিকল্পিত সরু অংশের মিলন স্থানের কারণে কদাচিৎ জট দেখা গেলেও সে জট ফ্লাই ওভারের উপরে ওঠার ক্ষেত্রে কোন তেমন দৃশ্যদ বাদার সৃষ্টি করে না। এরপর ফ্লাইওভারের উপরেতো সুপ্রশস্ত রাস্তা, সেখানেও জট তেমন নেই। অথচ দিনের ব্যস্ত অধিকাংশ সময়েই দেখা যাবে গুলিস্তান অংশে নামার অনেক আগেই জয়কালি মন্দির এলাকাতেই শুরু হয় যান জট। বিষয়টি খুবই স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে এই কারণে যে যাত্রাবাড়ী থেকে যত গাড়ী ফ্লাইওভারে উঠছে গুলিস্থান অংশে ততগাড়ী নামার মত ব্যবস্থা নেই। মাত্র তিনটি টোল কালেকশন বুথ, বুথ পেরিয়ে তারপর শ দেড়েক গজ পেরিয়ে সামনে নবাবপুর মোড়, মোড়ের চারপাশে ফুটপাতে হকারদের দৌড়াত্ম আর রাস্তা জুড়ে পন্যের পসরা আর মুন্সীগঞ্জের বাসষ্ট্যান্ড। অন্যদিকে ডানে মোড় নেয়ার অংশে লোকাল বাসের ষ্ট্যান্ড, সেখানে এলোমেলো ভাবে বহু বাস লোক উঠাচ্ছে প্রতিনিয়ত। মূল কথা নবাবপুর মোড়টি ঘুরতেই ফ্লাই ওভার থেকে আগত গাড়ী সমূহের যে জটে পড়তে হচ্ছে তার ফলে তৈরী হচ্ছে ফ্লাইওভারে থেমে নামার মুখে দীর্ঘ জট।
ছবির দৃশ্যগুলো একটি কর্মব্যস্ত দিনের সকাল ১০টা নাগাদ সময়ের। এ দৃশ্য অবশ্য প্রতিনিয়তের। দেখা যাচ্ছে টোল প্লাজার পরে নবাবপুর মোড়ের কাছে জটের কারণে থেমে আছে প্রচুর গাড়ী। টোল প্লাজার আগেও সংগত কারণে জট। টোল প্লাজা হতে শ দুয়েক গজ আগে কিছু গাড়ী আটকে রেখেছে গার্ড, এক এক করে টোল প্লাজা ফ্রি হলে সেগুলো ছাড়া হবে, এগিয়ে টোল দিয়ে ফ্লাইওভার থেকে বের হবে। সব মিলিয়ে টোল দেয়া আর টোল প্লাজা পেরিয়ে নবাবপুর মোড় পর্যন্ত এই মাত্র শ দেড়েক গজ যাবার মাঝে সময়ের যে দীর্ঘ সূত্রিতা, সাধারণ জনগণের কর্মস্থলে সময় মত পৌঁছানোর জন্য তা এক ব্যতয়ই বটে।
এদিকে ঠিকই কিন্তু শনির আখড়া বা রায়েরবাগ থেকে থেকে ফ্লাইওভার দিয়ে গুলিস্তান যেতে জনপ্রতি মানুষকে বাসে গুনতে হচ্ছে ১৫ টাকা, ফ্লাইওভার চালু হবার পূর্বে যে ভাড়া ছিল মাত্র ৫টাকা। ফ্লাই ওভারে বাসের টোলের জন্য এই অতিরিক্ত আদায়। লোকাল মিনিবাসে সাধারণ বসার সিট থাকে ৪০ টির মত এবং দাঁড়ানো যাত্রী থাকে কমকরে আরও ২০ জন। মোট ৬০ জনের থেকে ভাড়া বাবদ বাড়তি আদায় হচ্ছে (১০ গুন ৬০= ৬০০ টাকা। কিন্তু মিনিবাসের টোল হলো ১৭৩ টাকা। ভাড়ার ক্ষেত্রেও তাই জনগণের জন্য চরম দূর্ভোগ।
ভাড়ার এই দুর্ভোগ তারপরও অনেকটা মানুষের সয়ে গেছে কারণ যানজটের কষ্ট থেকে মুক্তি আর সময় বাঁচার বিষয়টি ফ্লাইওভারের বদৌলতে ভালোই সুফল বয়ে এনেছিলো। কিন্তু ফ্লাইওভারের গুলিস্তান অংশের বোতল নেক প্রবলেম তথা ক্ষুদ্র অংশের বিশাল স্বাধীনতা কে দূর করবে! যদিও প্রতিদিন এই ভোগান্তিতে ভুগতে ভুগতে মানুষ ঠিকই যেন অভ্যস্ত হয়ে উঠতে বাধ্য হয়ে পড়ছে।
ফলতঃ মানুষ আগে থেকেই বাস নেমে যাচ্ছে। প্রতিদিন নামতে নামতে সকলে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। এদিকে আবার নেমে টোল প্লাজা এড়িয়ে ফ্লাইওভারের বাউন্ডারি পেরিয়ে মোড়ের দিকে যাবার পথও হাঁটার উপযোগী নয়। ছবিতে দেখা যাচ্ছে বাউন্ডারীর সাথে মাত্র দু’হাত চওড়া একটি গেট রয়েছে, সেটাও খুলে দেয়া হয়েছে। হুড়মুড় করে মানুষ উঁচু সেই গেইট পেরিয়ে ফ্লাইওভার হতে বের হচ্ছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন