আজকাল বড় বড় বাসের সারা গা জুড়ে স্টিকার লাগানো থাকে, আগাগোড়া-উপর থেকে নিচ। এই স্টিকারগুলোতে সারি সারি ফুটো ফুটো থাকে, বাহির থেকে ছোট ছোট ফুটো ভেদ করে বাসের ভেতর দেখা যায় না তবে ভেতর থেকে ঠিকই চোখ আর ফুটোগুলোর দূরত্ব কম থাকায় বাহিরটা বেশ দেখা যায়, সে দেখাটা স্পষ্ট না হলেও বোঝার মত যথেষ্ট। মানুষের মস্তিষ্কের যে অংশে মন বা মন দর্শক অবস্থান করে সেখানেও এমন অসংখ্যা ভয় স্টিকারের মত আবরণ গড়ে তোলে, সেগুলো ভেদ করে বহিঃজগত দেখা যায় ঠিকই কিন্তু ঐ ফুটো ফুটো মিলে যতটুকু আর। যত ভয়, তত স্টিকার, তত ফুটো বন্ধ, আর বহিঃ জগত
থেকে মনটা তত আড়াল... এসব ভাবছিলো লিয়ন বাসে বসে বসে। স্টিকারের ফুটো দিয়ে বাহির দেখছিলো সে, সন্ধ্যা হচ্ছিলো, ফুটোর স্পষ্টতা কমছিলো। ঠিক যেমন বাহিরে আঁধার হলেই মনের যাবতীয় ভয় আরও চেপে বসে, মানুষের চিন্তা ক্ষমতা সংকুিচত হয়। বারবার ভুল হয়। ভয়ের স্টিকারগুলোতে যখন বাহির থেকে আবার কোন অতিরিক্ত বাতাস দেয়া হয় মানে চেপে থাকা ভয়কে তরান্বিত করা হয় তখন সেগুলো আরো দুলে ওঠে, ফুটো গুলোর পথ আরো সংকুচিত হয়...লিয়নের দুষ্টু মন এসব ভাবতে ভাবতে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলে। পাশের সিটের মধ্যবয়সী লোকটি এই পথে নতুন। একটু আগে শহরের শেষ প্রান্তে পেরিয়ে আসা ঝুলন্ত ব্রীজটা নিয়ে খুব আহ্লাদ দেখাচ্ছিলো, অনেক শুনছে সেটার কথা সে তাদের গ্রামের সবার মুখে। দেখার মতো, পানিতে কোন পিলার নাই, ব্রীজ ঝুলে আছে, কী আজিব! আজ দেখার সৌভাগ্য হলো । লিয়নের এটা সাপ্তাহিক যাতায়াতের পথ। ইন্টার সিটি বাস। বাবা-মার কাছে যেতেই হয়। গোধূলীর লাল রেখা শেষ সীমানায় মিশে যাচ্ছে, সেটা স্টিকারের ফুটো দিয়ে বোঝা যাচ্ছে। ফুটো গুলোর সাথে চোখ চেপে ধরে ফোকাস পয়েন্ট বারিয়ে সে দেখে নিয়েছে বাস লোকালয় ছেড়ে জঙ্গলের পথে ঢুকে গেছে। তার মাথায়ো খেলে গেছে দুষ্টুমী জংগলী হাওয়া। পাশের লোকটি গ্রামের। সে ভালো করেই জানে গ্রাম গঞ্জের সব রাত বিরাতে অতি প্রাকৃতিক কেচ্ছা কাহিনী। সেখান থেকেই শুরু করলো...ভাইজান আমরা কিন্তু সেই জঙ্গলের পথে ঢুকে পড়েছি।
থেকে মনটা তত আড়াল... এসব ভাবছিলো লিয়ন বাসে বসে বসে। স্টিকারের ফুটো দিয়ে বাহির দেখছিলো সে, সন্ধ্যা হচ্ছিলো, ফুটোর স্পষ্টতা কমছিলো। ঠিক যেমন বাহিরে আঁধার হলেই মনের যাবতীয় ভয় আরও চেপে বসে, মানুষের চিন্তা ক্ষমতা সংকুিচত হয়। বারবার ভুল হয়। ভয়ের স্টিকারগুলোতে যখন বাহির থেকে আবার কোন অতিরিক্ত বাতাস দেয়া হয় মানে চেপে থাকা ভয়কে তরান্বিত করা হয় তখন সেগুলো আরো দুলে ওঠে, ফুটো গুলোর পথ আরো সংকুচিত হয়...লিয়নের দুষ্টু মন এসব ভাবতে ভাবতে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলে। পাশের সিটের মধ্যবয়সী লোকটি এই পথে নতুন। একটু আগে শহরের শেষ প্রান্তে পেরিয়ে আসা ঝুলন্ত ব্রীজটা নিয়ে খুব আহ্লাদ দেখাচ্ছিলো, অনেক শুনছে সেটার কথা সে তাদের গ্রামের সবার মুখে। দেখার মতো, পানিতে কোন পিলার নাই, ব্রীজ ঝুলে আছে, কী আজিব! আজ দেখার সৌভাগ্য হলো । লিয়নের এটা সাপ্তাহিক যাতায়াতের পথ। ইন্টার সিটি বাস। বাবা-মার কাছে যেতেই হয়। গোধূলীর লাল রেখা শেষ সীমানায় মিশে যাচ্ছে, সেটা স্টিকারের ফুটো দিয়ে বোঝা যাচ্ছে। ফুটো গুলোর সাথে চোখ চেপে ধরে ফোকাস পয়েন্ট বারিয়ে সে দেখে নিয়েছে বাস লোকালয় ছেড়ে জঙ্গলের পথে ঢুকে গেছে। তার মাথায়ো খেলে গেছে দুষ্টুমী জংগলী হাওয়া। পাশের লোকটি গ্রামের। সে ভালো করেই জানে গ্রাম গঞ্জের সব রাত বিরাতে অতি প্রাকৃতিক কেচ্ছা কাহিনী। সেখান থেকেই শুরু করলো...ভাইজান আমরা কিন্তু সেই জঙ্গলের পথে ঢুকে পড়েছি।
কোন জঙ্গল?
বসের ভেতর এখন অন্ধকার। বাহিরে ঘন জঙ্গল। কানের কাছে মুখ নিয়ে লিয়ন ফিসফিসিয়ে বললো, এই যে গত সপ্তাহে ঘটনা শোনেনি। আমিও ছিলাম সে বাসে। নিজ চোখে দেখা। সেদিনটাও শুক্রবার ছিলো। আজও শুক্রবার। লোকটা নিকটে চেপে এলো। পাশের সিট থেকেও দুজন কান পেতেছে লিয়ন টের পেলো। লিয়ন আবার বলতে লাগলো, গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিলো। জানালা দিয়ে বাইরে অন্ধকারে বৃষ্টি দেখছিলাম। হঠাৎ দেখি দুটো আলো ছুটে আসছে। লম্বা লম্বা আলো। বলেই লিয়ন ঘড়ি দেখলো। বুঝলো আর একটু পরেই বাস থামবে সামনের পেট্রোল পাম্প কাম কফি শপে। কথা তার আরও দ্রৃততর করলো...প্রথমে ভাবলাম ওপাশ থেকে আসা কোন গাড়ীর গেডলাইট। কিন্তু কোন গাড়ী দেখতে পেলাম না। হঠাৎ পাশের লোকটা বাহিরে আলো দেখেতে পেলো। চোখ বড় বড় করলো, ঠিক সাথেই একটা গাড়ী পাশ কাটারো আওয়াজ হলো।
এটা কিন্তু গাড়ীর লাইট, ফুটো দিয়ে গাড়ীটা বোঝা না গেলেও শব্দতো পেলাম, বলেই লিয়ন আবার ফিসফিসিয়ে উঠলাে, তা সেদিন কিন্তু শুধু বৃষ্টির আওয়াজ গাছের পাতায় পাতায়, রিনঝিন রিনঝিন, আলো দুটো ছুটছে , হঠাৎ আলো দুটো আমাদেরে গাড়ীর সামনে চলে এলো, চারপাশে আরও অনেক আলো ঝলকে উঠলো, হঠাৎ গাড়ী আপনা আপনি থেমে গেলো সেদিন...
কথাদুটো বলার সাথে সাথে গাড়িটির সামনে আলোর ঝলক দেখা দেখা গেলো, থেমে গেলো গাড়ি...লিয়নের পাশের লোকটি এবং সামনের সিটের দুজন একসাথে “ও মাগো, আজও...” বলে চিৎকার করে বুকে জোড়ে জোড়ে ফুঁ দিয়ে উঠলো।
লিয়ন বললো, হ্যাঁ আজও বাস পাম্প কাম কফি শপটিতে ঠিক সময়েই থেমেছে প্রতিদিনের মতই।
Mamun M. Aziz
১৫/১০/২০১৮
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন