পৃষ্ঠাসমূহ

মঙ্গলবার, ২১ এপ্রিল, ২০২০

গল্পঃ আইশোলেসন

আইশোলেসন
------------------
যদি ভাইরাসগুলো দেখা যেতো, দেখতাম ওরা হাসে না কাঁদে, নাকি শুধু কবর খোড়ার মত গোঁমড়া মুখে খুঁড়েই চলেছে কোষের দেয়াল; যদি ভাইরাস গুলো কথা বলতো- জিজ্ঞাস করতাম কোন একটাকে ধরে কানে কানে- হোষ্ট চয়েজে কোন ক্রাইটেরিয়া রয়েছে কি? নাকি পেলেই হলো?

এই যে আমরা দুজন অতি নিকটজন দেড় যুগের যোজন যোজন দূরত্ব ঘূচিয়ে ১৪ তলার উপরে এই বারান্দায় বসে অনেকক্ষণ ধরে খোলা আকাশের দিকে চেয়ে বসে আছি, আমরা একজন কেবল হিসেব করেছি ’আজীবন কি পেয়েছি’ আর একজন ’কি দিয়েছি আজীবন’...এই বিপরীত আইডোলজি, বিপরীত মেরুর মত ছিটকে নিয়ে গেছে হাজার হাজার মাইল দূরত্বে। বিপ্রতীপ দর্শনে মাত্র দু বছরের সংসার ভেঙে গেছে অথচ করোনা ভাইরাসের কাছে দু’জনেই শুধু হোষ্ট, ক্রাইটেরিয়া এখানে বিয়োজন করেনি-অন্ধ ঘাতক।
সেই কোন ভিনদেশ থেকে বয়ে এনেছি আমি ঘাতক অজ্ঞাতে, সুপ্তির সাথে তো দেখা হবার কথা ছিলো না, কিন্তু কমন বন্ধুর ছেলের বিয়েতে দেখা হয়েই গেলো, অনেকক্ষণ কথাও হলো, কত বোঝালাম ছেলেটাকে বাইরে পড়তে পাঠাও, আমি সব খরচ দেবো, সেটা বোঝাতে বোঝাতেই অনেক সময় পেরিয়ে গেলো। এই সময় মহামারীকালে কেউ বিয়ে শাদির অনুষ্ঠান করে?- জেনে বুঝেও আমি চলে গেলাম, যদি ছেলেটাকে দেখতে পারি! ও কিন্তু সাথে করে আনেনি।
কেনো গেলাম তবে? না জানি আরও কত জনে ছড়িয়েছি।
বেশ ছিলো সে, আমাদের একমাত্র সন্তান শুভ্রকে মানুষ করতে জীবন উজার করে দিয়েছিলো, একটা পথকলি বিদ্যালয় খুলেছিলো, সেখানেও সে জীবনের অনেকটা অংশ দান করেছে, আমি কিছূ অর্থ দিয়ে নাম কামাতে চেয়েছিলাম, সে নেয়নি...
...গত সন্ধাতেই ও আমার সাথে আইশোলেসনে যোগ দিতে রাজী হয়ে আমার এই খালি ফ্ল্যাটে এসে উঠেছে, রাতে কথা হচ্ছিলো, দুই যুগের হিসেব হচ্ছিলো ছোট ছোট শব্দে- মিলছিলো না, কোন কিছুই নিলোনা কোনদিন আমার কাছে থেকে, না অর্থ না উপদেশ, আজ তবে কেনো নিলে ভাইরাস?
আমারা বাঁচবো তো?
খোলা আকাশ থেকে চোখ ফিরিয়ে সুপ্তি বলে উঠলো-আমাদের বাঁচতেই হবে, অন্তত একজনকে হলেও -শুভ্রর জন্য ।



মামুন ম. আজিজ
19/4/2020

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন