আমরা তিন বন্ধু গ্রুপ ভিডিওতে কথা বলছি।
একটা সময় ছিলো তিনজন একসাথে ভার্সিটির বকুল গাছের তলে প্রতিদিন অন্তত একবার হলেও চা আর সিগারেট সহযোগে কিছুক্ষণ আড্ডা দিতাম.. সে কবে কোন কালে... তখন দূরন্ত যৌবন আর এখন পড়ন্ত ... মোবাইলই ছিল না আর গ্রুপ ভিডিও কল তো তখনও কল্প বিজ্ঞান ... আজ ডালভাত এসব... বকুল তলে একসাথে হবার সুযোগ নেই , সিগারেটের টান শেয়ার নেই তবু আড্ডা আছে , চেহারা দেখাদেখি আছে ... যদিও তিনজন তিন দেশে ... অরূপ আমেরিকায়, আমি অষ্ট্রেলিয়ায় আর নিমিখ বাংলাদেশে, বাংলাদেশে থাকলেও তারও বকুল তলায় আর যাওয়া হয়নি - সে অনেককাল ...
ব্যস্ততার নিষ্পেশন ... পাশ দিয়ে যাবার সময় একটু তাকায় গাড়ীর জানালা খুলে..
সে বলে ... তোরা তো তাও পারবিনে...
অরূপ বলে ওঠে... গুগল রোড ভিউতে হলুদ পুতুল ড্রাগ করে টেনে নামালেই বকুল গাছ দেখা যায় ...ঘুরিয়ে
ফিরিয়ে দেখা যায়।
আমি হাসি ... বলি, বাদ দে বকুল গাছ...
এইতো রাজা দা জয়েন করেছে , আজ ওনার কোভিড ভেকসিন দেয়ার কথা …
রাজা দা: আর কইস নে, এইরাম এটটা যুকান্তকারী কান্ড কুরে ফেললাম, কিন্তু ছবি তুলতি পারলাম নারে..!
আমি বললাম: কেনো কেনো,
রাজা দা: আরে মোবাইল দেলাম তোমাগো ভাবীরি , সে আমার নগে ভেতরে গেল না, তার নাকি ভয কুরতেলো..
নিমিখ: আমারে বলতেন ... দৌড়ে গিয়ে ছবি তুলে আসতাম এরকম একটা জিনিস তার ছবি হবে না...
রাজা দা: এই নিমিখ, তুমি কি সিক্স মিলিয়ন ডলার ম্যান? না পাখনা রুয়েছে ঢাকারতে সাতক্ষীরা কি উড়ে আইসতে...
নিমিখ: তা না, তবে ভালো হয়েছে ... আপনেতো একা ছিলেন , ওরকম একা একা ছবি না তুলে ভালো করেছেন।
দেখেন না সবাই কেরকম দল বেধে ছবি তোলে... আপনি একা ছবি তুললে হইবে?
কোভিড টীকা দেয়ার ইতিহ্য বলে কথা
আমি একটা ছবি শেয়ার করে বললাম- এই ছবিটা দেখ ... আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কোভিডের ভেকসিন দিচ্ছে.. পাশে কেউ নেই... কি নি:সঙ্গ
আর বাংলাদেশের যে কারও কোভিড ভেকসিন দেয়ার ছবি দেখ, বেশ কয়েকজন তো ঘিরে থাকবেই ...আর যদি ভিআইপি কেও হয় তবে তো ষোলকলা পূর্ণ ... এক ক্যামেরা ফ্রেমেই শ’ খানেক হাত পা নাক চোখ মুখ ...
অরূপ: ... হ , এইটা হইলো হুজুক, সস্তা তেল মারা আরকি... আমরেকিার প্রেসিডেন্টের এই সস্তা তেল লাগে না...
রাজা দা: কি শুরা
কুরলে থামো না, তাইলে আমিও একা একা টীকা দিছি আর তোমার আমেরিকার পেরসিডেন্টও তাই... মিলটা বুঝতি পেরতোছো...
আমি: হে , আপনারা দুজনেই নিসঙ্গ , একলা...
অরূপ: ইটস নট জাস্ট তেল মারা, গাধামীও বটে…
নিমিখ: আরে দূর! এইটা হলো আন্তরিকতা। বাংলাদেশে মানুষ জন সবাই মিলেমিশে পাশে থাকে ... নিসঙ্গ হবার সুযোগই নেই... এইগুলো সেই মিলমিশের সিম্বল
রাজা দা: দূর মিয়ারা ... এইতো ছবি এইসে গেছে ওয়াটস আপে, আমি কলাম সত্যি ছবি তুলেলাম ,তোমাগো নগে একটু মজা নেচ্ছেলাম , আমি কি কবো আর, হাসপাতালের নার্স ওয়ার্কড বয় টয় সব তি আমারে চেনে তো ... সবতি মিলে ঘিইরে ধুরে তাগের মোবাইলে ছবি তুলেই ছা্ইড়লো...
তিন জন একসাথে বলে উঠলাম : রাজা দা কই কই, ওমা! একি তিন তিন জন নার্স মিলে টীকা দিচে আপনারে! আপনার স্যান্ডো মোড়ানো পাকানো বডিটায় হাত দিয়ে আছে তিনটি নার্স । তা ভাবী জানে তো রাজা দা?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন