এই ধরেন আমি বহুকাল ধরে কবিতা লিখি, দুই যুগ ধরে গল্পও লিখি টুকটাক করে … কিন্তু আমি স্বীকৃত কবিও নই বা গল্পকার নই মানে স্বীকৃত সাহিত্যিকও নই ( যেহেতু আমি সমাজের ঘুনেধরা অনেক কিছু মানি না বা বিপক্ষে সেহেতু সেই সমাজের স্বীকৃতি না পাওয়াই আমার প্রাপ্তি) …
এখন আমার মত বা আমার চেয়ে একটু ভালো লেখে বা একটু খারাপ লেখে এমন হাজারো সাহিত্যিক ঘুরছে ফিরছে বাংলাদেশে … এর মধ্যে হঠাৎ যদি তাদের একজন বা দুজন এমন একটা টপিক ধরতে পারে যে টপিক পংকিল সরোবরে পদ্মফুলের মত উচ্চকিত তাইলেই সেই সাহিত্যিকের দিকে মানুষের নজর যাবে ।
তাই হচ্ছে — লিখছে ‘হুমাযূন আহমেদ বলে কোন সাহিত্যই রচনা করেন নি, তাঁর লেখার কোন মান ই নাই ।’
আর মানুষ লাফায়ে উঠছে … এইতো পাইয়াছি একজন ভিন্নধারার সাহিত্যিক, হুমাযূন আহমেদকে ধুয়ে দিচ্ছে … তাকে অনেকে নিকুচিও করছে কিন্তু তার কিন্তু জন স্বীকৃতি বাড়ছে … এই উপায়ের কারণে নেগেটিভ কথা বার্তার দিকে ঝুকছে বুদ্ধিমান ।
আমি বলি- দেশে পাঠকই নাই সেইখানে আবার সাহিত্যের প্রসার কোথায় ।
চার দশক ধরে যখন হুমায়ূন আহমেদ একাই লেখা বিক্রি করে প্রকাশকদের লালায়িত করছিলেন তখন তথাকথিত প্রকৃত সাহিত্যিকরা হা করে তাকিয়ে ছিলেন - পাঠকও তৈরা করতে পারেন নাই আর বিশ্ব বাজারে তুলে ধরারা মত লেখা লিখলেও তা বিশ্ববাজারে তুলে ধরতে পারেন নাই … মানে আমার মত নোভিশের লেখাও আম পাঠক পড়ে না , গুরুগম্ভীর সাহিত্যিও আম পাঠক পড়তে শেখে নাই । তবে অবশ্যই কিছু গুরুগম্ভীর এবং ধ্রুপদী সাহিত্য আছে যা আবার আরেক ধ্রপদী বিজ্ঞজন পড়ছেন …
এর মানে সাহিত্যে সরল লেখা থাকবে, গুরুগম্ভীর লেখা থাকবে, ধ্রুপদী লেখা থাকবে, ঐতিহাসিক প্লট থাকবে, যেকোন বিষয়ের আলোচনা সমালোচনা থাকবে ….ইত্যাদি … মানে আমি বুঝি ঐ সব মিলেই তো সাহিত্য।
তো হুমাযূন আহমেদ সরল কথা সাহিত্য লিখলে লিখছে, পাঠক পড়লে পড়ছে … সমস্যা হচ্ছে বাংলাদেশের পাঠকের মধ্যে সব রকম পড়ার কোয়ালিটি গ্রো করেছে খুবই কম … যে কারণে হুমায়ূন পড়লো পাঠক যে হারে সেই হারে ধ্রুপদী বা জটিল সাহিত্য পাঠক পড়লো না ক্যান…
এইখানে রাগ ঐ যে সকল সামলোচক এক বাক্যে হুমায়ূন আহমেদকে তুড়ি মেরে ফেলে দিয়েছে …
আমি ব্যক্তিগতভাবে বলতে পারি - ছোট বেলা যদি সেবা আর হুমায়ূন আহমেদ নিয়ে না মাততাম হাই স্কুলে উঠে বঙ্কিমও হয়তো পড়াতম না আর এখন এই বয়সে এসে নোয়া হারারির SAPIENS কিনে একটু একটু করে পড়তাম না।
আমি … ব্যক্তিগতভাবে দুনিয়ার যেকোন বই পড়ার পক্ষে।
পড়ায় বাধ সাধলে পাঠক কমবে - বাংলাদেশের পাঠক সমাজ তার উদাহরণ ।
আবারও বলছি - যখন হুমায়ূন আহমেদ একচেটিয়া নিজস্ব পাঠক তৈরী করছিলেন তখন ধ্রুপদি লেখকরা পাঠক নিয়ে ভাবেই নি… এখন হুমায়ূন আহমেদ হয়ে গেছে শত্রু … পাঠক তৈরী না করলে লেখকও লেখার প্রণোদনা পায় না । পাঠক বানান…হুমায়ূন আহমেদের লেখা সাহিত্য কি না সাহিত্য নয় তা কোন ম্যাটারই করে না যদি আপনার একটা তথাকথিত ধ্রুপদি ও গুরুগম্ভীর সাহিত্য সামনে চলে আসে - পাঠক পড়ে এবং বিশ্বমানের হয় -সেটাই ম্যাটার করে । তাহলে তখনই মানুষ সরল আর গম্ভীর সাহিত্যের তুলনাও করতে শিখবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন